প্রকাশিত: Sun, Jun 30, 2024 2:54 PM
আপডেট: Tue, Apr 29, 2025 11:57 PM

যে কারণে আজ বিএনপি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে

ফজলুল বারী : সর্বশেষ সামরিক অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলো বলিভিয়ায়। এতে করে পৃথিবীর বেশ উপকার হলো। দেশে দেশে অনেক সমস্যা থাকতে পারে। কিন্তু এর সমাধান সামরিক অভ্যুত্থান নয়। বলিভিয়ার ব্যর্থ অভ্যুত্থানের হোতা সেনা প্রধানকে বরখাস্ত এবং গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে তার সহযোগী আরও ১১ জন সেনা অফিসারকে। দেশের মানুষ অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে নেমে এসেছে রাস্তায়। বিরোধীদল সমূহও রাস্তায় নেমে এসে বলেছে আমরা গণতন্ত্রে আস্থাবান। সামরিক অভ্যুত্থানে নয়। বাংলাদেশে জিয়া ও এরশাদ সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন। এরপর রাজনৈতিক দল গঠন করেন। জিয়া দীর্ঘদিন ঢাকা শহরে রাতের বেলা কার্ফু দিয়ে দেশ চালিয়েছেন। তার আমলে একের পর এক ব্যর্থ অভ্যুত্থানে প্রাণ হারিয়েছেন শতশত সেনা অফিসার ও জওয়ান। যাদের অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। সেনাবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা অফিসার জওয়ানরা স্বাধীন দেশে সামরিক আইনে দেশ শাসন মেনে নিতে পারেননি। জিয়া তাদের প্রহসনের বিচারের নামে ফাঁসিতে হত্যা করেন। 

আজ বিএনপি যে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে এর অন্যতম কারণ সেই পরিবারগুলোর অভিশাপ। লোভী ছাড়া কোনো সৎ মানুষ জিয়া-এরশাদের রাজনৈতিক দলে যোগ দেয়নি। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের জিয়া বিভিন্ন বিদেশি দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেন। এরশাদ ক্ষমতায় এসে তাদের রাজনৈতিক দল ফ্রিডম পার্টি গঠন, দৈনিক মিল্লাত নামক পত্রিকা প্রকাশসহ নানান সুযোগ সুবিধা দেন। কারণ এদের দুজনেই বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বেনিফেশিয়ারি। পঁচাত্তরের খুনিরা এরশাদ আমলে দেশে ফিরে এসে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে থাকে। এমনকি তখন তারা তখন শেখ হাসিনার জীবননাশের চেষ্টায় ধানমন্ডির ৩২ নাম্বার রোডের বাড়িতেও হামলা চালিয়েছে। জেনারেল আজিজের ভাইরা সেই হামলা প্রতিহত করতে গিয়ে মামলায় পড়ে ফেরারী হন। এরশাদ আমলে পঁচাত্তরের খুনি ফারুক রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করেছেন। খালেদা জিয়ার আমলে আরেক খুনি রশীদকে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলের নেতা করা হয়। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সেই নির্বাচনের দিন বনানীর পুরনো ডিওএইচএস-এর বাড়িতে বসবাসরত অন্যতম আত্মস্বীকৃত খুনি কর্নেল (অব.) ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, জিয়া মারা যাবার পর এরশাদ খালেদা জিয়াকে শুধু বাড়ি ও দশ লাখ টাকা অনুদান দেননি, তাকে বিয়েও করতে চেয়েছিলেন। 

কিন্তু বাংলাদেশের ট্র্যাডিশনাল আর্মি তা মেনে নেবে না বলে তারা তাতে সম্মতি দেননি। ফারুকের বক্তব্যে স্পষ্ট হয় এরশাদের ক্ষমতা দখলের নেপথ্যে তাদের সমর্থন ছিল। কিন্তু এরশাদও পরে তাদের সঙ্গে বেঈমানি করায় তারা ভিন্নভাবে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করেন। এর একটি চিন্তা ছিল এরশাদবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে মিশে গিয়ে কাজ করা। এই চিন্তার অংশ হিসাবে খুনিদের একজন তৎকালীন দুই ছাত্র নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি সায়েন্স-সহ কয়েকটি বিভাগে ছাত্র নেতারা ভর্তির মাধ্যমে ছাত্রত্ব বজায় রাখতেন। সেই খুনি সাবেক সেনা অফিসাররাও সেখানে ভর্তি হতে চেয়েছিলেন। সম্ভবত বৈঠককারী ছাত্র নেতৃদ্বয়ের সম্মতির অভাবে এই চিন্তা আর অগ্রসর হতে পারেনি। আজকের বিএনপি, জাতীয় পার্টির নেতাদের সিংহভাগের বাপ-দাদারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার আলবদরদের বংশধর। 

এলাকায় এলাকায় খোঁজ নিলেই তা বেরিয়ে আসবে। এখন দিনেরাতে যত আলহামদুলিল্লাহ, জাজাকাল্লাহ, খাইরান প্রজন্ম দেখবেন এদের সিংহভাগ তাদের উত্তরসূরী। এরা বাঙালির সংস্কৃতি চিন্তা চেতনার ধারক-বাহকও নয়। এমন নানান ধারা উপধারা সমূহ পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যার মাধ্যমে দেশকে পিছনের দিকে নিয়ে যাবার  অপভ্রংশ। শেখ হাসিনার গত পনের বছরে শাসনেও দেশ সেখান থেকে ফিরে আসতে পারেনি। দিনে দিনে সেই প্রত্যাবর্তন কঠিনতর হয়ে যাচ্ছে। সামরিক শাসন, তাদের রাজনৈতিক উচ্চাকাক্সক্ষা দেশকে পিছিয়ে দেয়। কারণ দিনে দিনে তাদের উচ্ছিষ্টের সুবিধাভোগী লোকজন তাদের আন্ডা-বাচ্চা জেনারেশন তৈরি হয়ে গেছে। তাদের একটি অংশ এখন বর্তমান শাসকদলেও ঢুকে পড়েছে। লেখক: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংবাদিক। ফেসবুক থেকে